8 Historical Place Of Sylhet | Best Place For Travellers
সিলেটের ঐতিহাসিক স্থান (Historical Place Of Sylhet) নাম বলতে চাইলে অনেক আছে। প্রকৃতির রানী নামে খ্যাত সিলেট।
তার আগে বলা চলে ৩৬০ আউলিয়ার পুণ্যভূমি বৃহত্তর সিলেটের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে শাহ অলি,সুফি, রাজা বাদশাহের স্মৃতি বিজড়িত স্থাপত্য কীর্তি।
বিভিন্ন স্থাপনা, অলি-সুফিদের মাজার সিলেটের ঐতিহাসিক স্থান (Historical Place of Sylhet)বলে অভিহিত।
এখানে বাছাইকৃত সিলেটের ৯ টি ঐতিহাসিক স্থান এর সংক্ষিপ্ত বিবরন তুলে ধরা হলে, পর্যায়ক্রমে বাকি গুলু তুলে ধরবো।
হজরত শাহ জালাল (রঃ) এর মাজার শরীফঃ
প্রথম (Historical Place of Sylhet) হযরত শাহজালাল (রঃ) এর মাযার সিলেট শহরে খ্যাতনামা স্হান। আজ থেকে ৬০০ বছরের বেশি আগে তিনি মারা গিয়েছেন। তবুও মাযার জিয়ারত করার জন্য অনেক দূর থেকে অসংখা ভক্ত বিভিন্ন স্হান থেকে এখানে আসেন। ইতিহাসবিদগণের মতে তিনি ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে দিল্লী হতে এখানে এসেছিলেন ও হিন্দু রাজা গৌর গোবিন্দকে পরাজিত করে সিলেট-এ স্হায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
হযরত শাহ পরাণ (রঃ) এর মাজার শরীফঃ
শাহ পরাণের মাজার সিলেটের একটি ঐতিহাসিক এবং আধ্যাত্মিক স্থাপনা। যা হচ্ছে ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে মধ্যপ্রাচ্য হতে ইসলাম ধর্ম প্রচারক হযরত শাহ জালাল (রঃ) অন্যতম সঙ্গী বা অনুসারী শাহ পরাণের সমাধি।এটি সিলেট শহরের পূর্ব দিকে খাদিম নগরে অবস্থিত। শাহ জালালের দরগাহ শরীফ থেকে প্রায় ৮ কি.মি. দূরে হযরত শাহ পরাণ রঃ এর মাজার অবস্থিত। শাহ জালালের দরগাহর মতো এ মাজারেও প্রচুর দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। ঐতিহাসিক মুমিনুল হকসহ অনেকেই লিখেছেন; সিলেট বিভাগ ও ভারতের বিভিন্ন এলাকায় শাহ পরাণের দ্বারা ইসলাম ধর্মও সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার সাধিত হয়। এজন্য এটি ২য় (Historical Place of Sylhet) ।
আলী আমজাদের ঘড়িঃ (Historical Place of Sylhet)
আলী আমজদের ঘড়ি বাংলাদেশের সিলেটের অন্যতম প্রধান দর্শনীয় স্থান, যা সিলেট সদরের অন্তর্গত। এটি সিলেটের অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে সিলেট মহানগরীর প্রবেশদ্বার -উত্তর সুরমা -ব্রিজের ডানপার্শ্বে সুরমার নদীর পাশে ঐতিহাসিক ঘড়িটি নির্মাণ করেন সিলেটের কুলাউড়ার জমিদার আলী আমজদ খান।
নবাব আলী আমজাদের ঘড়ি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে ।
সিলেট শহরের সৌন্দর্য বর্ধনে এই ঘড়িটি অন্যতম। সিলেট বেড়াতে এসে ঘড়িটি দেখতে সবারই ইচ্ছা জাগে। ঐতিহাসিক কিন ব্রিজ ও চাঁদনীঘাট এলাকাটি সিলেট মহানগরের একটি ঐতিহাসিক স্থান । নদীর পাড় বাঁধাই করে রেলিং দিয়েও অত্যাধুনিক ফোয়ারা স্থাপন করে এলাকাটি একটি বিনোদনের স্পট তৈরি হয়েছে।
প্রতিদিন দেশী-বিদেশী পর্যটক ও নগরবাসী এখানে বেড়াতে, অবসর সময় কাটাতে এবং চিত্তবিনোদনের জন্য আসেন। প্রায় ১৪০ বছর যাবৎ উক্তটি ঘড়িটি আলী আমজাদের স্মৃতি বহন করে আসছে।
শাহী ঈদগাঁহ: (Historical Place of Sylhet)
১৭ শতাব্দীতে মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব সিলেট শাহী ঈদগাঁহ নির্মাণ করেছিলেন । এটি দেখতে দূর্গের মত মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে প্রতি বছরই মুসলিম সম্প্রদায়ের দুটি বড় ঈদের জামাত এখানে অনুষ্ঠিত হয় ৷
চৈতন্য দেবের মন্দির:
শ্রী চৈতন্য দেবের মন্দির সিলেট শহর হতে ৪৫ কিলোমিটার উত্তর পূর্ব দিকে অবস্হিত। প্রায় ৫০০ বছরের পুরাতন এ শ্রী চৈতন্যের মন্দিরটি। প্রতি বছর বাংলা ফাল্গুন মাসে পূর্ণিমা রাতে এখানে একটি মেলার আয়োজন হয়ে থাকে । যেখানে হাজার হাজার দেশী বিদেশী ভক্ত মেলাটি উপভোগ করতে আসেন ।
গৌর গোবিন্দের দূর্গ:
গৌড় গোবিন্দ ১৩০০ শতকের শ্রীহট্ট অঞ্চলের খণ্ড রাজ্য গৌড়ের শাসক। তার নাম গোবিন্দ; এর সাথে রাজ্যের নাম গৌর সংযুক্ত হয়ে তিনি ‘গৌর গোবিন্দ ‘ নামে অভিহিত হন। রাজা গৌর গোবিন্দ ছিলেন ধার্মিক হিন্দু। ধর্ম পালনে ছিলেন কঠোর । অন্য ধর্মের প্রতি ছিলেন খুবই অশ্রদ্ধাশীল ও অসহিঞ্চু। শ্রীহট্ট ইতিহাসে তিনি অত্যাচারী রাজা হিসাবে সর্বশ্রেষ্ঠ।
শাহ জালাল সিলেট অভিযানে মুসলমান সৈন্যবাহিনীর গৌর বিজয় হলে রাজা গৌড় ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় এবং সিলেট মুসলমানদের অধীনে চিলে আসে।
একটি সৌন্দর্যময় পাহাড়ের চূড়ায় মুরারিরচাঁদ সরকারী কলেজটি অবস্হিত যার দক্ষিণ পশ্চিম দিকে রাজা গৌর গোবিন্দ দৃগর্টি রয়েছে। এটিও একটি দর্শনীয় স্হান ।
জৈন্তাপুর রাজবাড়ি (Historical Place of Sylhet)
জৈন্তাপুর সিলেট শহর হতে ৪৩ কিলোমিটার দূরে সিলেট শিলং রোডের পাশে অবস্হিত। প্রাচীন রাজার রাজধানী নামে খ্যাত এ জৈন্তাপুর । এখানে খাশিয়া ও জৈন্তা পাহাড় ও জৈস্তা ভূমি আছে। জৈন্তাপুরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এ রাজার রাজত্বের নিদর্শনগুলো।জৈন্তাপুর বন এবং জাফলং এলাকার আশেপাশে, শ্রীপুর এবং তামাবিল এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে প্রচুর লোকজন এখানে আসে।
সিলেট শহর হতে ৩৫ কিলোমিটার দূরে জৈন্তাপুর উপজেলায় ইহা অবস্হিত। ১৮ শতকে জৈন্তা রাজার রাজধানী ছিল জৈন্তাপুর। রাজবাড়ি হচ্ছে জৈস্তা রাজার রাজপ্রাসাদ । এটি জৈন্তাপুর বাজারের কাছে। এ রাজপ্রাসাদটি বর্তমানে ধ্বংসের পথে তবুও অনেক পর্যটক জৈন্তা রাজার নিদর্শন দেখতে আসে।
যদি আপনি জাফলং-এ ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন তাহলে জাফলং-এ সারাদিন বেড়িয়ে মাত্র ৪ কিলোমিটার পথ (সিলেট অভিমুখে) আসার পর রাস্তার পাশেই পাবেন আলুবাগান নামক স্থানে Jaintia Hill Resort (জৈন্তিয়া হিল রিসোর্ট)। জৈন্তা রাজার মেয়ে জৈন্তিয়াশ্বরীর নাম অনুযায়ী রিসোর্টির নাম জৈন্তিয়া হিল রিসোর্ট (Jaintia Hill Resort) ।
সন্ধায় সিলেট শহরে ফিরে না গিয়ে Jaintia Hill Resort এ রাত্রী যাপন করতে পারেন ।সাধারণত: শীতকালে জাফলং ভ্রমণের উপযুক্ত সময় তবে পাহাড়ী ঝর্ণা উপভোগ করতে চাঁদনী রাতে বৃষ্টির মৌসুমে আসা উচিত । একেবারে কাছে থেকে ঝর্না দেখতে হলে আপনাকে অবশ্যই Jaintia Hill Resort (জৈন্তিয়া হিল রিসোর্ট) কে বেছে নিতে হবে ।
একরাত্র জাপন করে পরের দিন সকালে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে মাত্র ৮ কিলোমিটার এগুলেই জৈন্তাপুর রাজবাড়ি ।
মুরারি চাঁদ কলেজঃ (Historical Place of Sylhet)
1892 মুরারিচাঁদ কলেজ সালে প্রতিষ্ঠিত । তৎকালীন সিলেটের প্রখ্যাত শিক্ষানুরাগী রাজা গিরিশচন্দ্র রায় এর অনুদানে এম সি কলেজ প্রতিষ্ঠা লাভ করে । কলেজটির নামকরণ করা তারই প্রমাতামহ মুরারিচাঁদ এর নামে । কলেজটি নগরীর বন্দর বাজারের নিকট রাজা জি. সি. উচ্চ বিদ্যালয় এর পাশে ছিল । 1891 সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজটিতে এফ. এ. ক্লাশ খোলার অনুমতি পেয়ে থাকে । 1892 সালের 27 জুন আনুষ্ঠানিকভাবে মুরারিচাঁদ কলেজ যাত্রা শুরু হয়। ছাত্রদের বেতন ছিল ৪ টাকা এবং ১ম বিভাগে এন্ট্রান্স (SSC)পাশকৃতদের জন্য বিনা খরচে পড়ার ব্যবস্থা করা ছিল।
সিলেটের ঐতিহাসিক স্থান (Historical Place of Sylhet) গুলু সিলেট তথা উপমহাদেশের সংস্কৃতির ধারক ও বাহক।