লালাখাল (Lala Khal) নীল সবুজের সমারোহ:
আসলে ৩৫ কিলোমিটার দুরত্ব হচ্ছে সিলেট থেকে লালাখাল যাওয়ার উদ্দেশ্যে যে স্টপিজ এ আপনি নামবেন । সিলেট শহর থেকে তামাবিল জাফলং রােডে হরিপুর দরবস্ত পেরিয়ে সারিঘাট স্ট্যান্ড তারপর সারি নদীতে নৌকায় চড়ে অথবা গ্রামীণ রাস্তায় আড়াই থেকে তিন কি.মি. দূরত্বে অবস্থিত।
প্রাইভেট কার অথবা রিজার্ভ বাস যেভাবেই আপনি আসবেন সারীঘাট দক্ষিন পারে পার্কিং করে সীড়ি বাধানো ঘাটে নৌকায় উঠেই যাত্রা শুরু করবেন আপনার স্বপ্নের লালাখাল (Lala-Khal) এর উদ্দেশ্যে ।
লালখাল চা বাগানঃ
প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্যে আচ্ছাদিত লালাখাল চা বাগান এক বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এ বাগান ঘুরে ঘুরে সারাটি দিন সেখানে কাটিয়ে দিতে পারেন। হাতি দেখার কারাে শখ থাকলে সে শখও আপনার পূরণ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
কারণ জৈন্তা দালান বাড়ীর হাতি প্রায়ই এখানে বিচরণ করে। অনেক বড় আকারের এ হাতিটি। মাহুত সব সময় সাথে থাকে। ইচ্ছে করলে এর উপর আপনি সওয়ারও হতে পারেন।
লালাখাল (Lala Khal) নদীঃ
মেঘালয় পর্বতের পূর্বের অংশের Janitia Hill Resort থেকে যে ঝর্না টি বয়ে এসেছে তারই জ্বলধার এসে মিসেছে লালাখাল (Lala Khal) নদীতে, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত লালা খাল অঞ্চলে হয় বলে অনেকে ধারনা করেন।
ভারতের মাইন্ডু নদী লালাখাল নদী হয়ে সারীনদী নামে প্রবেশ করে এবং তা ভাটি অঞ্চল হয়ে গোয়াইনঘাটের গোয়াইন নদী অথবা পিয়াইন নদীর সাথে মিশেছে । লালখালের উদ্দেশ্য যখন নৌকা যোগে যাত্রা শুরু করবেন স্টারটিং পয়েন্ট সারীনদীর সারী খেয়াঘাট। খেয়াঘাট টি বর্তমানে পর্যটকদের সুবিধার জন্য নদীর নিচ পর্যন্ত সিড়ি টেনে উপরে তুলা হয়েছে । পানির শুকিয়ে নিচে চলে গেলেও পর্যটক রা নৌকায় উঠতে কোন অসুবিধায় পড়েন না।
লালাখাল (Lala Khal) দৃষ্টি নন্দন নীল সবুজের দেশ
সারীঘাট থেকে যখন যাত্রা শুরু করবেন আপনার অনুভূতি হবে যেন “মিশরের নীল নদের” মাঝখান দিয়ে নৌকাটি লালাখাল (Lala Khal) গন্তব্যের দিকে ছুটে চলেছে । সারী নদীর পানির রঙ নীল (কেরোসিনের কালার) আবার কোথাও চোখে পড়বে সবুজ । সারীঘাট থেকে লালাখাল পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার নীল এবং পান্না সবুজের জলরাশি আপনাকে অন্য এক অনুভূতি জাগ্রত করবে ।
রোমান্টিক কাঁপল হলে অজান্তেই গান ধরে বসবেন সে খেয়াল থাকবেনা । অবশ্য বৃষ্টি হলে বা বর্ষার মৌসুমে পানি একটু ঘোলাটে হয়ে যায় । স্বচ্ছ পানি পূরো শীত কাল জুড়ে থাকে । নদীর নিচে শ্যাওলার ঘা ঝাকুনি আপনি খালি চোখে দেখতে পারবেন । নাজিমগড় রিসোর্টের কল্যানে আপনি আবার স্পীডবোটে লালাখাল (Lala Khal) যেতে পারবেন । ভাড়া যদিও অনেক তারপরও টাইটানিকের জুটির ন্যায় দুহাত প্রসারিত করে, চুলগুলো বাতাসে ছেড়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি পৌছতে চাইলে স্পীডবোট ই ভালো ।
নদীর দু-ধারের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে করতে আপনি ক্লান্ত হতে পারেন । অবশেষে যখন লালাখাল (Lala Khal) ঘাটে নামবেন সবুজ চাপাতার গন্ধ হঠাত করে আপনার নাকে লাগবে, হয়ত মাথাটা ঝিম ধরে আনমনা হয়ে ছুটে যাবে চা-ফ্যাক্টরী পানে । চা বাগানের আকাবাক পথে, বাগানের সবুজ উচু নিচু ঢেউয়ে, আবার বাগানের ভেতরে ঝি-ঝি পোকার শব্দে আপনার ভ্রমনে তৃপ্ততা এনে দিবে । বনভোজন অথবা পিকনিক সব ক্ষেত্রেই লালা খাল আপনার মনের মত । বন্ধু-বান্ধব মিলে কোন এক বড় গাছে নিচে রান্না-বান্না করে খেতে কিজে ভাল লাগবে তা বলে বুঝানো যাবেনা
লালখাল (Lala Khal) কিভাবে যাবেনঃ
কিভাবে যাবেনঃ সিলেট থেকে সারীঘাট দক্ষিন পারে নেমে নোকা যুগে, আবার উত্তর পারে নেমে সি,এন,জি-অটোবাইক-অথবা পায়ে হেটে যতে পারবেন । ভাড়ার ক্ষেত্রে ইঞ্জিল নৌকা ১২০০-২৫০০ লোকসংখ্যা বুঝে নৌকা ওয়ালারা চার্চ করে। অবে যাচাই বাছাই করা ভালো । উত্তর পার থেকে ৮ জনের রিজার্ভ ব্যাটারী চালীত ইজিবাইক ১০০-১৫০ টাকা সি,এন, জি ও তাই । তবে এ ক্ষেত্রে সিট ক্যাপাসিটি অনুযায়ী লোকাল ভাড়া দিয়ে গেলে খরচ কম পড়বে । রিজার্ব নিতে গেলে অতিরিক্ত চাইবে এটা স্বাভাবিক । ফিরে আসার পথে তারই পুনরাবৃত্তি করবেন।
Summary
সারী নদির নীল পানি আর নদীর দু-পাশের সবুজের সমারোহের স্বপ্নের লালা খাল ভ্রমনে লাইনের বাসেও যেতে পারবেন সিলেট শহরের সােবহানি ঘাট থেকে অথবা নদীর ওপারের বাস। টার্মিনাল থেকে। ভাড়া ৩৫/= টাকার মত লাগবে এরপর রিক্সা অথবা নদীপথে নৌকায় যেতে পারবেন। এরপরও কোন পর্যটক রাস্তা হারালে লেখকের মােবাইলে ফোনের মাধ্যমে পরামর্শ নিতে পারবেন।