জৈন্তিয়া হিল রিসোর্ট (Jaintia Hill), প্রকৃতির রাণী
Jaintia Rajbari বা জৈন্তিয়া রাজ্য এক পরাক্রমশালী খাসিয়া রাজার রাজকন্যা জৈন্তিয়া রানির নামেরই বহিঃপ্রকাশ। Jaintia Hill Resort নামকরন যে প্রাচীন সেই দাম্ভিক মহারাণী কে স্মরনীয় করার উপলক্ষ্য মাত্র। Jaintia Rajbari আজ অযতনে পড়ে থাকলেও জৈন্তিয়া রানীর ইতিহাস আজও অফলাইন এবং অনলাইনে সংরক্ষিত আছে ।
Jaintia Hill Resort জাফলং যাবার ৫ কিলোমিটার পূর্বে অর্থাৎ জৈন্তাপুর উপজেলার শেষ সীমান্তে অবস্থিত । প্রায় এক একর জায়গায় নিয়ে Jaintia Hill Resort নির্মান করা হয়েছে। ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশস্থ অত্যন্ত সুন্দর রিসোর্ট টি পর্যটকদের পলকেই মন কেড়ে নেয়। Jaintia Rajbari জৈন্তাপুর থানা সদরে অবস্থিত । ইতিহাস আর ঐতিহ্যের স্বাক্ষী মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা অনেক বিলুপ্ত প্রায় রাজ প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ আপনাকে আরো কৌতুহলী করবে সন্দেহ নাই। নিম্নে Jaintia Rajbari ও Jaintia Hill Resort নামের সপৃক্ততার কিছু ইতিহাস তুলে ধরা হলো।
জৈন্তা রাজবাড়ীর (Jaintia Rajbari) এর ইতিহাস :
পর্যটকদের সুবিধার্থে বলে রাখা ভাল, প্রাচীন জৈন্তা রাজ্যের এ রাজবাড়ী (jaintia rajbari)এখন আর রাজবাড়ী হিসাবে নেই। বর্তমানে এটি জৈন্তাপুর উপজেলা সদর বা প্রশাসনিক এলাকা। তবে এখানে রাজবাড়ীর নিদর্শন ও ধ্বংসাবশেষ বিদ্যমান।
“It is good to say that the palace of the ancient Jainta kingdom is no longer a palace for tourists. It is currently the administrative area of Jaintapur Upazila. But there are signs and ruins of the palace. “
উপজেলা সদর বা রাজবাড়ী – jaintia rajbari এলাকায় ঢুকলেই দেখতে পাবেন কয়েকটি বিশালাকার পাথর। যেগুলােকে বিশেষজ্ঞরা মেঘালিথিক পাথর হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। আয়তনে প্রস্থে ৪/৫ ফুট এবং দৈর্ঘ্যে এ পাথর ৬/৭ ফুটও আছে। জাতীয় জাদুঘর ছাড়া এত বিশালাকার পাথর দেশের কোথাও হয়ত পাবেন না। হেলান দিয়ে পাথরে বসার জন্য খাড়াভাবে রয়েছে একটি করে পাথর যেগুলাে
খুবই দৃষ্টিনন্দন।
বামদিকে রয়েছে বিচারালয়, যা ইরাদেবী মিলনায়তন নামে রূপান্তরিত। একটু ডান দিকে তাকালেই দেখবেন মােকামবাড়ীর নিদর্শন ও এর বিপরীতে ৩০০ ফুট উঁচু ওয়াচ টাওয়ারের ধ্বংসস্তুপ। আরাে সামনের দিকে এগুলে দেখবেন রাজার দিঘী, বিভিন্ন কারুকাজের গেইট,বিশালাকার মন্দির ও ভূমিকম্পে ধ্বংস রাজবাড়ীর ভিটাও এখনাে ঠিকে থাকা সাক্ষী হিসাবে শুধু গেইট রয়েছে।
পানি খাওয়ার জন্য রাজার তৈরী বিভিন্ন পরীখা বা কুয়া আরাে কতকিছু। পাশাপাশি খাসিয়াদের পরিচ্ছন্ন ও দৃষ্টিনন্দন বাড়ী। আরাে
দেখতে পাবেন প্রশাসনিক নগ্ন টিলা যেখানে বসে রাজার সাথে মােগল রাজার শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
পাশাপাশি রয়েছে সরকারের সাইটাস গবেষণা কেন্দ্র। এসব দেখে নিশ্চয়ই আপনার মন থেকে যেতে চাইবে।
জৈন্তিয়া (Jaintia)নাম করনের ইতিহাস
জৈন্তিয়ার ইতিহাস (History Of jaintia Rajbari)ও ঐতিহ্য গ্রন্থ থেকে জানা যায়-“প্রমীলা নামে এক ভদ্র মহিলা জৈন্তা রাজ্যের অধিশ্বরী ছিলেন। তাই পৌরাণিক যুগে জৈন্তাকে প্রমীলা রাজ্য বা নারীদেশ বলা হত।” জৈমিনি মহাভারত গ্রন্থে উল্লেখ পাওয়া যায়, পান্ডবকুলপতি যুধিষ্ঠির যজ্ঞশ্ব নিয়ে প্রমীলার সাথে মহাবীর অর্জুনের যুদ্ধ হয়েছিল। এই রাজ্য jaintia rajbari হিন্দু নৃপতিদের দ্বারা শাসিত হত।
তাই জনশ্রুতি অনুসারে ঐ জয়ন্ত রায়ের নামেই জয়ন্তা মতান্তরে জৈন্তা নামের উৎপত্তি ঘটে। কারাে কারাে মতে রাজা জয়ন্ত রায়ের ৩ পুত্র ও ১ পুষ্য কন্যা ছিল। ঐ কন্যার নাম জৈন্তি। জৈন্তির বিয়ে হয় খাসিয়া সর্দারের পুত্র লন্ডবের সাথে। রাজা জয়ন্ত রায় জৈন্তাপুর রাজ পরগনা পােষ্য কন্যা জৈন্তিক, জাফলং পরগনা ১মপুত্র কেদাশ্বর রায় কে, দ্বিতীয় পুত্র ধনেশ্বর রায়কে চারিকাটা পরগনা এবং তৃতীয় পুত্র কন্দপ রায়কে ফালজুর পরগনা বন্টন করে দেন। রাজা জয়ন্ত রায়ের মৃত্যুর পর পােষ্য কন্যা জৈন্তী রাণী পরাক্রমশালী হয়ে উঠেন এবং তিন ভাইকে হত্যা করে তিনি তাদের রাজ্য বা পরগনাগুলাে দখল করে নেন।
জৈন্তিয়া নামকরনে ভিন্নমত
কারাে কারাে মতে নিজের নামে মতান্তরে পালকপিতা জয়ন্ত রায়ের নামে জয়ন্ত বা জৈন্তিয়া মতান্তরে জৈন্তারাজ্যের নামকরণ করেন। প্রকাশ থাকা আবশ্যক জৈন্তি হিন্দু ধর্মের হলেও খাসিয়া লন্ডবের সাথে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হওয়ায় জৈন্তি রাণীর উত্তরসূরী হিসাবে খাসিয়া নৃপতিরা জৈন্তা রাজ্যের ক্ষমতায় আরােহণ করেন। কিন্তু জৈন্তি রাণী হিন্দু হওয়ার সুবাধে খাসিয়া নৃপতিরাও নিজেদেরকে হিন্দু বলে পরিচয় দিতেন এবং তাদের আচার আচরণ পূজা পদ্ধতি সকলই হিন্দুধর্ম অনুসরণে ছিল।
jaintia rajbari এর জৈন্তি রাণীঃ
জৈন্তি রাণীর পর পর্যায়ক্রমে ২৩ জন খাসিয়া রাজা রাজত্ব করেছেন এবং পর্বত রায় খাসিয়া রাজাদের মধ্যে প্রথম রাজা ছিলেন। জৈন্তা রাণীর গর্ভজাত সন্তান রাজা রাম সিংহের মৃত্যুর পর তার একমাত্র উত্তরাধিকারী ভাগনা রাজা ইন্দ্র সিংহ ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে জৈন্তারাজ্যের সিংহাসনে আরােহণ করেন। তিনি স্বাধীন জৈন্তা রাজ্যের সর্বশেষ রাজা। ইতিহাসের গােচরে পুঞ্জিভূত থাকার জন্য জানাতে চাই পূর্বে উল্লেখিত ১৭-পরগনা এবং বর্তমানে প্রতিবেশী দেশ ভারতের আসাম প্রদেশের নওগা জেলার কিয়দংশ নিয়ে প্রাচীন জৈন্তারাজ্য বিস্তৃত ছিল।
প্রাচীন জৈন্তা রাজ্যকে প্রত্নতত্ব বিভাগের প্রয়ােজনের খনি হিসাবে উল্লেখ করা যেতে পারে। অন্যদিকে ভারতের পুরান ও তান্ত্রিক গ্রন্থগুলােতে উল্লেখ রয়েছে। জৈন্তা রাজ্যে দুর্গার উদ্দেশ্যে নরবলি দেওয়া হত কিন্তু বাস্তবে এ ধরনের কোন প্রমাণ, কত শতাব্দীতে কত সালে এ ধরনের কাজ প্রচলিত ছিল এর কোন সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। ৭০০ খ্রিস্টাব্দে হিউয়েন সাঙ-এর আগমনের সময় অনুমান করা হচ্ছে জৈন্তা কামরুপ রাজ্যের অংশ ছিল।
প্রাচীন শাসক
ব্রাহ্মণ রাজাদের দ্বারা জৈন্তা শাসিত ছিল বলে জানা গেছে। ১১০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে কামদেৰ শাসন করেছিলেন বলে জানা গেছে। তাঁকে জৈন্তা রাজ্যের প্রথম শাসক হিসাবে প্রতিয়মান করা গেছে। গবেষণা থেকে পরিলক্ষিত হয় যে জৈন্তারাজ্যে র শৌর্যবীর্য এবং প্রশাসনিক কাঠামাে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল।
বলা যেতে পারে মােগলরা যখন সমস্ত উপমহাদেশে তাদের শাসন-শােষণ অব্যাহত রেখেছিল তখনাে জৈন্তা রাজ্যের সিংহ পুরুষরা তাদের রাজ্য স্বাধীন রাখতে সক্ষম হন এমনকি দীর্ঘদিন শিয়ালের মত ধূর্ত ইংরেজরাও এই জৈন্তা রাজ্য কাবু করতে পারেনি, এজন্য এ অঞ্চলের জনগণ সাহসী ও অহংকারে সকল সময় মাথা উঁচু রাখতে সংকল্পবদ্ধ।
From William Thaker of east India Company to Robert Lindsay, no one has ever been able to defeat the kings of the kingdom of Jainta until 1835. The residence of the principal of Sylhet MC College – now known as Thaker tila.
জৈন্তিয়া হিল রিসোর্ট নামকরনের ইতিহাস
প্রকৃত অর্থে জৈন্তা রাজ্যের রানী জৈন্তিয়াশ্বরীর নাম অনুসারে Jaintia Hill Resort এর নামকরন করা হয়। ভারতের সীমান্তবর্তী মেঘালয় পাহাড় । তার পাদদেশে পাহাড়ি ঝর্না ধারার উপলব্ধতা, মনে হয় যেন জৈন্তিয়া রানী আজও কেদে কেদে বলে আমি আছি, আমি থাকবো, শুধু আমার স্মৃতি গুলু ধরে রেখো।